প্রতিবছর কলেজ এবং ইউনিভার্সিটির নতুন ডিগ্রীধারীরা বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে নিজের অবস্থান করে নিতে সচেষ্ট। কিন্তু একটি অভিজাত ডিগ্রী কি সবসময় পারে সাফল্যের নিশ্চয়তা দিতে?
এই বিষয়ে গুগল চেয়ারম্যান এরিক স্মিড তরুণদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। বিজনেস ইনসাইডার অবলম্বনে তার পরামর্শগুলো পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
এই বিষয়ে গুগল চেয়ারম্যান এরিক স্মিড তরুণদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। বিজনেস ইনসাইডার অবলম্বনে তার পরামর্শগুলো পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
এরিক স্মিডের মতে, "ব্যবসাক্ষেত্রে, বিশেষ করে প্রযুক্তি জগতের নিয়মটাই এমন যে, আমরা যে কাজ করি সেই কাজে দক্ষতাই যথেষ্ট নয়, বরং সেই উত্তাল সাগরের কোনো একটি ঢেউয়ে আপনাকে চড়ে বসতে হবে এবং ওই ঢেউয়ে চেপেই পৌঁছাতে হবে তীরে।"
গুগলের চেয়ারম্যান এরিক স্মিড এবং গুগলের পণ্য বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাথন রোজেনবার্গ ‘গুগল কীভাবে কাজ করে’ শিরোনামে তাদের নতুন বইয়ে এমনটাই জানিয়েছেন।
গুগলের চেয়ারম্যান এরিক স্মিড এবং গুগলের পণ্য বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাথন রোজেনবার্গ ‘গুগল কীভাবে কাজ করে’ শিরোনামে তাদের নতুন বইয়ে এমনটাই জানিয়েছেন।
১. মনে করুন চাকরি উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের মতো : ‘মনে করুন আপনার পেশাগত ক্ষেত্রটা হলো উত্তাল সাগর, যেখানে আপনি সার্ফিং করছেন। আর সেই উত্তাল সাগরের ঢেউ হলো সেই প্রতিষ্ঠান সেখানে আপনি কাজ করছেন। আর আমরা সবাই সবচেয়ে বড় ঢেউটাতে চড়েই তো তীরে যেতে চাই।’
চাকরির বিষয়টাকে এভাবে ব্যাখ্যা করে তিনি আরো বলছেন, সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগ হতে পারে দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং রূপান্তরিত হচ্ছে এমন একটা ইন্ডাস্ট্রিতে বিশেষ কোনো ক্ষেত্রের দক্ষতা অর্জন করা।
চাকরির বিষয়টাকে এভাবে ব্যাখ্যা করে তিনি আরো বলছেন, সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগ হতে পারে দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং রূপান্তরিত হচ্ছে এমন একটা ইন্ডাস্ট্রিতে বিশেষ কোনো ক্ষেত্রের দক্ষতা অর্জন করা।
২. প্রযুক্তি বোঝে যে একটি কোম্পানিতে যান : সিলিকন ভ্যালিতে না হোক বেছে নিন এমন প্রতিষ্ঠানকে যারা প্রযুক্তি বোঝে এবং প্রযুক্তিগত ব্যবসার দিক থেকে যারা দূরদর্শী। কারণ এসকল প্রতিষ্ঠান দ্রুত বর্ধনশীল এবং টিকে থাকতে সক্ষম, অপরদিকে বাকিরা হয় পিছিয়ে পড়ে নয়তো হারিয়ে যায়।
৩. একটি পাঁচ বছরের মেয়াদী পরিকল্পনা করুন : তরুণদের উচিত আগামী পাঁচ বছরের পরিকল্পনা করা, এমনকি দশ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান সে সম্পর্কে আগেই ভেবে রাখা উচিত। পরিকল্পনায় অবশ্যই যেসব প্রশ্নের উত্তর থাকতে হবে, সেগুলো হলো—আপনি কী হতে চান? আপনি কী করতে চান? আপনি কতটা সাফল্য চান? পছন্দের চাকরিতে আপনার পদটা আসলে কী হবে? আপনার রিজিউমে বা জীবনবৃত্তান্তটা আসলে দেখতে কেমন? এসব প্রশ্নের উত্তর মেলাতে মেলাতে আপনার সক্ষমতা ও দুর্বলতার দিকগুলো খুঁজে বের করুন। আর সেই অনুযায়ী পাঁচ বছরের প্রস্তুতি ও কর্মপরিকল্পনা ধরে এগিয়ে যান।
৪. সংখ্যা তাত্ত্বিক বিষয়ে স্বচ্ছন্দ হোন : ‘আমরা এখন এমন এক সময়ে বাস করছি যেখানে অবাধ তথ্য প্রবাহ এবং সংখ্যার ব্যবহার রয়েছে । এজন্য পরিসংখ্যানবিদের প্রয়োজন, যাতে এই তথ্য-উপাত্তকে কাজে লাগানো সম্ভব হয়। এই অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে যারা যত বেশি বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা রাখেন, তারাই তত বেশি সফল হবেন। তথ্যই একুশ শতকের তলোয়ার। যারা এটা ঘরে তুলতে পারবেন, তারাই এখানে সামুরাই।’ এরিক স্মিড আর জনাথন রোজেনবার্গ এভাবেই এই যুগকে ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু তার মানে এই না যে, আগে পড়া না থাকলেও আপনাকে এখনই পরিসংখ্যানের বই কিনতে বাজারে যেতে হবে। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত-সংখ্যা বিশ্লেষণের সঙ্গে পরিচিত হোন। একটা স্তরের পর পেশাগত ক্ষেত্রে এটা খুবই জরুরি।
৫. আপনার কোম্পানি এবং শিল্প সম্পর্কে যতটা সম্ভব জানুন : আপনি প্রযুক্তি, জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ, ফার্মাসিউটিক্যালস, বিজ্ঞাপন, গণমাধ্যম, বিনোদন, ব্যাংকিং কিংবা কনজিউমার ইলেকট্রনিকস—যে ক্ষেত্রের পেশাজীবীই হন না কেন, নিজের ক্ষেত্র সম্পর্কে বিষদভাবে জানার চেষ্টা করুন। নিজের পেশার গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখুন। আপনার পেশার অন্যদের সঙ্গে এসব খবর আদান-প্রদান করুন এবং এভাবে নিজেদের একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন। টুইটার, লিঙ্কডইন বা এ ধরনের সামাজিক যোগাযোগের সাইট ব্যবহার করেও তা করতে পারেন।
৬. নিজের কাজ আর অবস্থানটা স্পষ্ট করে বুঝুন : ভাবুন অফিসে হঠাৎ করেই আপনার সিইওর সামনে পড়ে গেলেন এবং তিনি জানতে চাইলেন আপনি এখন কী করছেন। মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে আপনি তাকে কীভাবে বলবেন যে, আপনি এখন ঠিক কোন কাজটা করছেন এবং এটা কোম্পানির কোন প্রকল্প বা কোন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে করা হচ্ছে। ফলে আপনাকে কোম্পানিতে নিজের কাজ এবং অবস্থানটা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানতে ও বুঝতে হবে। ঠিক যেমন একটা নতুন চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেলে মাত্র ৩০ সেকেন্ডেই ওই চাকরির জন্য আপনার যোগ্যতার সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক অংশটুকু বলে ফেলতে পারতে হবে।
৭. নতুন কোথাও যান : স্মিড ও রোজেনবার্গ বলেন, আপনার যদি নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের ক্ষেত্রের বাইরে কোথাও কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়, তাহলে আপনার সেখানে যাওয়া উচিত। তারা বলেন, ‘ব্যবসা, তা তার আকার বা সুযোগ যত বড় বা ছোটই হোক, সব সময়ই বৈশ্বিক। কিন্তু মানুষ সহজাতভাবেই আঞ্চলিক।’ এমন ভাবার কোনো কারণ নেই যে, আপনার সব ক্রেতা এবং আপনার ব্যবসাক্ষেত্রের বাকিরাও আপনি জগতের যেখানে বাস করেন, সেখানেই সীমাবদ্ধ। তাদের পরামর্শ, তরুণ বয়সে সুযোগ পেলে চাকরি নিয়ে বিদেশে কাজ করে আসুন। বিদেশ সফরের সময় ভাবুন আপনার কোম্পানির যে কাজ তা ওই দেশে কীভাবে হয়। ধরুন, আপনি একটা সংবাদপত্রে কাজ করেন। মনোযোগ দিয়ে ওই দেশের সংবাদপত্রের খবরগুলো বিশ্লেষণ করুন, আপনার পত্রিকা কীভাবে লেখে আর ওরা কীভাবে লেখে তা বিশ্লেষণ করুন।
৮. আপনার আবেগ এবং দায়িত্ব সচেতনতার মাঝে সমন্বয় সাধন করুন : স্মিড ও রোজেনবার্গ সহমত পোষণ করে বলেন, আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য শুধু আপনার পছন্দের কাজ করাই নয় বরং আপনার ক্যারিয়ার যেন আপনাকে একটি আরামদায়ক জীবন দিতে পারে এবং একই সাথে যার মাধ্যমে আপনার কাজের মাধ্যমে পৃথিবীর উন্নতিতে আপনারও ভূমিকা থাকে।
0 comments:
Post a Comment