যারা ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত তারা ভবিষ্যতে কোন পেশায় কাজ করতে চান তা আগে থেকেই ভেবে কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন।আপনি কোন ধরনের কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সে অনুযায়ী আপনার ক্যারিয়ার গড়া প্রয়োজন।কারণ আপনার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সঠিক ও উপযোগী চাকরি থেকে আপনি বঞ্চিত হতে পারেন।আর এর মাসুল দিতে গিয়ে আপনার জীবন থেকে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে।ফলে কর্ম জীবনে আপনি সফল হতে পারবেন না।তাই ক্যারিয়ার সচেতন মানুষের জন্য সময়ের সেরা ৫টি ক্যারিয়ার সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ-
১. ব্যাংকিং
বর্তমানে চাকরির বাজারে ভালো অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকিং সেক্টর।বর্তমান তরুণ-তরুণীদের পছন্দের চাকরির মধ্যে ব্যাংকিং সেক্টর অন্যতম।এ সেক্টরে কাজের ভালো পরিবেশের সঙ্গে বেতন কাঠামো অনেক ভালো।পাশাপাশি চাকরির নিরাপত্তা এবং পেনশনের ব্যবস্থা আছে।আমাদের দেশে সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি এখন অনেক বেসরকারি ব্যাংক সেবা দিয়ে যাচ্ছে।সেবার মান সরকারি ব্যাংক থেকে বেসরকারি ব্যাংকের ভালো বলে বেসরকারি ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । আর সেবার মান উন্নত করতে হলে অধিক কর্মী প্রয়োজন।এখানে বিভিন্ন পোস্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন যোগ্যতা চাওয়া হয়।তবে এমবিএ/এমবিএম/পোস্ট গ্র্যাজুয়েট/সিএ ডিগ্রিসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।যদি ব্যাংকিং সেক্টরে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে উপরোক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করে চেষ্টা করে যান।
২. টেলিকমিউনিকেশন
বর্তমানে আমাদের দেশে টেলিকমিউনিকেশনে ক্যারিয়ার গড়ার একটা ধুম পড়ে গেছে।এখানে চাকরি করার কারণে একজন কর্মী অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে।বেতন এবং কাজের পরিবেশও ভালো।তাই শিক্ষিত বেকারদের পছন্দের প্রথম সারিতে পড়ে এ সেক্টরের চাকরি এবং এখানে কাজ করার সুযোগও অনেক বেশি।আর এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে হলে অবশ্যই ডিগ্রিধারী হতে হবে।পাশাপাশি টেলিকমিউনিকেশনে কোনো কোর্স করা থাকলে ভালো।এ সেক্টরে উদ্যোম ও স্মার্ট প্রার্থীকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।আপনি যদি টেলিকমিউনিকেশনে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে কোম্পানির নিজস্ব ওয়েবসাইটে অথবা পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেখে সিভি জমা দিতে পারেন।সিভি জমা দিয়ে যদি আপনার সিভি মানসম্মত ও নির্ভুল হয় এবং যে যোগ্যতা চাওয়া হয় তা যদি আপনার থাকে তাহলে লিখিত পরীক্ষার ডাক আসতে পারে।লিখিত পরীক্ষার পর ভাইবা বোর্ডের সম্মুখীন হতে হবে।সেখানে উত্তীর্ণ হলে আপনার কাঙ্খিত চাকরিটি পেয়ে যেতে পারেন।এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে হলে গ্র্যাজুয়েটসহ নেটওয়ার্কিং ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক্যাল, কম্পিউটার ও টেলিকমিউনিকেশনে জানা থাকলে ভালো।
৩. এনজিও
আমাদের দেশে চাকরির ক্ষেত্র তৈরিতে এনজিও এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।এনজিওগুলো শহর থেকে গ্রামে সব স্থানেই চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করেছে।বিদেশি এনজিওগুলোর পাশাপাশি দেশীয় অনেক এনজিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।যদিও একটু পরিশ্রম করতে হয় এ সেক্টরে তার পরও ভালো একটি অবস্থানে যেতে পারলে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়।এ সেক্টরে চাকরির জন্য মাস্টার্স ডিগ্রি, সিএ, এমবিএ ইত্যাদি শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়।ইংরেজিতে লেখা ও বলা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।তাই এ সেক্টরে নিজেকে গড়ে তুলতে চাইলে উপরোক্ত যোগ্যতা অর্জন করে নিন এবং প্রাথমিকভাবে কিছু অভিজ্ঞতার জন্য ফিল্ড লেভেলে কাজ করুন।ধীরে ধীরে আপনি আপনার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন।
৪. মেডিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস
আমাদের দেশের ঔষধ শিল্প অনেক উন্নতি করেছে।বর্তমানে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে ঔষধ।তাই এ সেক্টরে প্রতিনিয়ত দক্ষ লোকবলের প্রয়োজন হচ্ছে।এ সেক্টরে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের গুরুত্ব দেয়া হয়।এছাড়া এমএসসি, এমবিএ, এম ফার্ম, বি ফার্ম ইত্যাদি শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়।মেডিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরে কাজের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো মাসিক নির্দিষ্ট বেতনের পাশাপাশি টার্গেট পূরণের ওপর অতিরিক্ত কমিশন দেয়া হয়।বর্তমানে অনেকেই ডিগ্রি পাস করে এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ে তুলছে।কাজের ক্ষেত্র অনেক বড় হওয়ায় এ সেক্টরে চাকরি পেতে সহজ হয়।কাজের অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকলে এখানে খুব দ্রুত বেতন বেড়ে যায়Ñ তাই নতুন যারা চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে তাদের জন্য উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার মেডিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টর।
৫. গার্মেন্ট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং
বর্তমানে আমাদের দেশের প্রধান রপ্তানি খাতই হলো গার্মেন্টস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং।দেশের মোট রপ্তানি আয়ের অধিকাংশই এ খাত থেকে আসছে।বিশাল এ সেক্টরে প্রচুর দক্ষ লোকবল প্রয়োজন পড়ছে।সেই তুলনায় কোম্পানির মালিকরা লোকবল পাচ্ছেনা।এ সেক্টরে যেমন প্রয়োজন হচ্ছে সাধারণ শ্রমিক তেমনি প্রয়োজন দক্ষ ও শিক্ষিত লোকবল যারা প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ে কাজ করবে।গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশে অনেক বায়িং প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যারা বিদেশ থেকে অর্ডার সংগ্রহ করে দেশীয় গার্মেন্টে কাজ পরিচালনা করে থাকে।এখানেও দক্ষ লোকবলের সঙ্কট।এ সেক্টরে বর্তমানে উচ্চ বেতন দিয়ে দক্ষ লোকবল নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।এ সেক্টরে গ্র্যাজুয়েটসহ বিবিএ, এমবিএ ইত্যাদি যোগ্যতা চাওয়া হয়।পাশাপাশি মার্চেন্ডাইজিং জানা থাকলে চাকরি পেতে সহজ হয়।
উপরের প্রতিটি সেক্টরই বর্তমানে ক্যারিয়ার গড়ার উপযুক্ত স্থান।তাই যারা নতুন পেশা জীবনে প্রবেশ করছেন তাদের আগে নিজের সম্পর্কে জেনে এবং নিজের কর্মদক্ষতা নিজেকেই যাচাই পূর্বক এসব সেক্টরের যেটি উপযুক্ত মনে হয় সেখানে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।কারণ আপনার সঠিক সিদ্ধান্তই আপনাকে আপনার জীবন সাজাতে সাহায্য করবে।আর সঠিক সিদ্ধান্তই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়।তাই জীবন সাজাতে ঠিক করে নিন আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার।
0 comments:
Post a Comment